Sunday, September 14, 2008

আমার আনন্দ দিন

আজ বিকেলে ডিপার্টমেন্টে গিয়ে বসে আছি। কিছু কাজ জমে আছে।
গড়িমসি করে করে আর শেষ করা হয় না। আলসেমি আর Procrastination এ আমি বিশেষ ব্যুৎপত্তি
অর্জন করেছি বলেই মনে হচ্ছে। যত না কাজ করি, তার চেয়ে বেশি আগডুম বাগডুম ভাবি।

এখানে আসার পর থেকে আমার সারাটা সময় কাটছে ভারতীয়দের সাথে। দক্ষিন ভারতের ছেলে পিলে।
আজ তো প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল। কোথাকার কোন আমি, কোথাকার কোন শ্রীনিবাসন --- ভাগ্যের অদ্ভুত খেয়ালে পাঁচ পাঁচটি বছর ধরে এমন ভাবে আছি---যেন সে আমার হারিয়ে যাওয়া ছোট ভাই।

আমার যাদের সাথে ওঠাবসা, তাদের মাঝে সঙ্গত কারনেই আমি বর্ষীয়ান। আমার বয়েসের সব চাইতে কাছাকাছি যে আছে, সে কম করে হলেও চার বছরের ছোট। কিন্তু এরা বয়েসে ছোট হলে কি হবে--মেধায়, প্রজ্ঞায় আমার চেয়ে এগিয়ে।

এদের সাথে ওঠাবসা করতে করতে আমার মাঝে বেশ একটা 'তামিল' 'তামিল' ভাব চলে এসেছে। আমি ওদের বেশ কিছু ভাল গালাগাল মুখস্থ করে রেখেছি। সময়ে অসময়ে সেগুলো 'আবৃত্তি' করে বেশ আমোদ পাই।
আমার চেহারাতে দ্রাবিড় ভাব প্রকট। এক সকালে আমার রুমমেট শ্রীনি'র এক বন্ধু এসেছে বেড়াতে। বেচারা এসেছে ভার্জিনিয়া থেকে। শ্রীনি তাকে লিভিং রুমে বসিয়ে দিয়ে গোসল করছে। এরমধ্যে মঞ্চে আমার প্রবেশ। মাত্র ঘুম থেকে উঠেছি---এর মাঝে ডান চোখের ঘুম মনে হচ্ছে কাটেনি। কেবল বাঁ চোখে পিটপিট করে তাকচ্ছি। সেইটাতে আবার আমি তেমন ভাল করে দেখতে পাইনা। কিন্তু কি আর করা। ডান চোখটাকে জাগাতে ইচ্ছে করছে না। বাথরুম শ্রীনি'র দখলে। সে বেরুলে পরে আমি যাব। এরই মাঝে টলতে টলতে আমি লিভিং রুমে হাজির।

কিছুক্ষন কারো মুখে কথা নেই। আমাদের যেন তিন চক্ষুর মিলন হল(ডান চোখ তখনো ঘুমুচ্ছে)। নীরবতা ভেঙ্গে আমিই 'হাই' বললাম। হাত বাড়িয়ে করমর্দন করতে করতে জানা গেল, সে অশোক। অশোক এখন আমাদের টিভিতে একটা তামিল ছবি দেখছে। কিছু লোক অস্বাভাবিক দ্রুততায় কথা বলে যাচ্ছে। অনেকটা কিচির-মিচিরের মত শোনাচ্ছে। ভাগ্যিস, আবহ সঙ্গীত ছিল। শুনে মনে হল---কমেডি চলছে হয়ত।

আমি আবার আধা ঘুম আর আধা সজাগ অবস্থায় চলে গেছি। একমাত্র যে চোখ, সেইটাও বিট্রে করছে। মনে হচ্ছে, আর কিছুক্ষনের মাঝে সেও ধর্মঘটের ডাক দিয়ে দেবে।

এমন সময়----

'ইড়িম পিড়িম গিড়ম কুর কুর, উঁ, হেহেহে"

আমি চমকে উঠে বিষম খেয়ে খুজছি আওয়াজের উৎস। দেখি অশোক আমার দিকে সপ্রশ্ন ব্যাকুল হয়ে তাকিয়ে আছে।

"ঈড়ম গিরম ঘিড়ম ভু ভু কু কু, উঁ? হে হে হে হে"

আবারো সেই যান্ত্রিক ক্যাচক্যাচ। দেখলাম অশোক বাবাজী আওয়াজ দিচ্ছেন। এবং মুখটা সপ্রশ্ন ভাব ছেড়ে ধীরে ধীরে 'সক্রোধ' এলাকায় চলে যাচ্ছে।

ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে হলে এখনি---

'ইয়ে, আমাকে কিছু বলছ?', ইংরেজীতে সাবধানী প্রশ্ন আমার।
এবার বেশ দ্রুত কিছু কিড়মিড় আওয়াজ শোনা গেল। মনে হল অশোক কিছুটা Offended feel করছে।
বাধ্য হয়ে বলতে হল, ভায়া হে, আমি তো তামিল-কানা। আমাকে দেখে তামিল মনে হলেও এ বান্দা বাংলাদেশের। 'এন্না ভিশেষাম"(তামিল ভাষায়, কেমন আছেন) এবং আরো কিছু অনুচ্চার্য্য গালি গালাজ আমার সম্বল। এর বাইরে আমি পুরো কানা।

এখন দেখি অশোক কাঁচুমাচু। বেশ অপ্রস্তুত হাসি হেসে জানাল, আমার চেহারা এত্ত 'convincing' যে সে ধরেই নিয়েছে আমি তামিল ভাষাভাষি। এইটা নিয়ে খানিক হো হো হবার পর জিজ্ঞেস করলাম, সে ঐ সময় কি বলছিল আমাকে? জানা গেল, আমার ধারনা সত্যি। ঐটা আসলেই কমেডি 'ফিলিম' এবং একটা পর্যায়ে দারুন নাকি হাসির সিকোয়েন্স গিয়েছে। আমাকে হাসতে না দেখে এবং ঝিমুতে দেখে বেচারা চাইছিল তার সাথে এই আনন্দ-যাত্রায় আমাকেও শরীক করতে।

কিন্তু হা হতোস্মি!

ভাষার কারনে আশা পুরন হইল না।

7 comments:

Anonymous said...

হাহাহা! এন্না ভিশেষাম,তামিল-"রয়েল-বেঙ্গল"-টাইগার?

আমার এক মাদ্রাজি বন্ধু পড়তে এল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। প্রথম ক্লাসে লেকচারার পড়াচ্ছেন বাংলায়। সে বেচারী কয়েকবার অনুরোধ করার পর ফলটা হল এই- বাংলা লেকচারের ফাঁকে ফাঁকে একলাইন ইংরেজি, 'হেই মাদ্রাজি, ক্যান ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড মি?'

Anonymous said...

শুভভাই, বর্ণনা আর হিউমারের এমন ককটেল প্রতিদিন না হোক, সপ্তাহে একটা করে চাই কিন্তু।

~ পুতুল ~ said...

হা হা হাহা, খুব মজা পেলাম লেখা পড়ে। আমি যখন প্রথম মাদ্রাজে যাই, ভয়ানক সব পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। ওদের একটা স্বভাব হলো, ওরা হিন্দী পারলেও বলবে না, কিংবা না বোঝার ভান করবে। চরম বিরক্তিকর!!! আমার এক লাইনই মনে আছে, আইয়ো আম্মা , ইল্লে পা? আমি আগা মাথা কিছুই না বুঝে হা করে তাকিয়েছিলাম :। আর ভাবছিলাম, আমাকে আম্মা ডাকে ক্যান? :@

Tareque Aziz said...

হা হা হা ----

~ পুতুল ~ said...

pore shunechilam, cheleder appa/anna bole ar meyeder amma :S

~ পুতুল ~ said...

btw, shironaamhin ID ta amar i.... oita close kroe diyechi. ashol nam nilam :S confuse hoyen na comment dekhe

Tareque Aziz said...

নাহ, কনফিউজ হইনি মোটেই----