জীবনে এতদিন বেকার বোধহয় আগে কখনো ছিলাম না---
কে জানে হয়ত বা ছিলাম।
অনেক দিন ধরে এই পৃথিবীতে পড়ে আছি। সব কিছু আগের মত মনেও পড়ে না। মনে পড়ে শুধু ছেঁড়া ছেঁড়া দৃশ্যপট---স্কুল ছুটি-- মায়ের সাথে করে ঘরে ফেরা-- মাঝে মাঝে কারেন্ট চলে যাওয়া রাতে ঘি দিয়ে ভাঁপ ওঠা সাদা ভাত খাওয়া--- পাখি ধরার ফাঁদ পেতে সারা দুপুরের রোদ মাথায় নিয়ে বসে থাকা--- সন্ধ্যা বেলায় শিয়ালের দলের গর্বিত হুকুৎকার (হুক্কা হুয়া বলে চিৎকার-- শব্দটা মাত্র তৈরি করলাম--হে হে হে) শুনে গুটিশুঁটি মেরে বাবার কাছে গিয়ে বসা, শীতের দিনে সকালে উঠে মুখ হাঁ করে ধোঁয়া বের করা এবং অদৃশ্য সিগারেট খাচ্ছি এমনটা ভেবে নিজের মনে মনেই হাসা---
স্মৃতির পর স্মৃতি, দৃশ্যের পর দৃশ্য
এখন বেকার হয়ে আমার অখন্ড অবসর। আগে যে স্মৃতিগুলো কাছে ভীড় করার সময় পেত না---এখন তারা সকাল হতেই আমার কোলে উঠে বসে থাকে। আগে যে সব স্মৃতিকে কড়া শাসনে রাখতাম--এখন তাদের ডেকে ডেকে দুধ-কলা খেতে দেই---তারা আমার ঘরের ছাদে বসে সারা দিনমান বাক-বাকুম করে।
এক নিরাময় অযোগ্য আলসেমিতে পেয়ে বসেছে। কোন কিছুই করতে মন চায় না।
খালি মনে হয়--অনেক তো হল--এবার খানিক দম নে বেটা!
মাঝে মাঝে মনে হয়---কী ভীষন তাড়াতাড়ি আমার দম ফুরিয়ে গেল এই পৃথিবীতে। লোকজন দেখি দিন-কে-দিন অধরাকে ধরার আশায় ছুটছে দিক-বিদিক। আমার বয়েসী কতজনকে দেখি এখনো যেন সতেরো বছরের কিশোর।
আমিই কেন জানি বুড়োটে মেরে গেলাম। এ নিশ্চয়ই আমার উল্টা-পাল্টা সব গান শোনার ফল! আমি যখন ইস্কুলে থাকতেই ক্ল্যাসিকেল গান শোনা শুরু করলাম--আমার আত্মীয়ের মন্তব্য ছিল---এইসব তো বুড়োদের গান--তুই এই বয়েসে এইসব শুনছিস কেন?
কে জানে, তার কথাই ঠিক হবে হয়ত-- এইসব শুনে শুনেই---
জীবনে আরেকটা দুঃখ আমার কখনো যাবে না।
টাকা-পয়সা আমার জমানো হল না। অর্থ নিয়ে আসলে সেই অর্থে আমার কোন মুগ্ধতা বা লোভ নেই। বরং উল্টা---এক ধরনের বিরাগ আছে, মমত্বহীনতা আছে। কখনো বুদ্ধিমানের মত টাকা জমানো শিখিনি। এইটা যে আসলে জমানো যেতে পারে এই ধারণাটাই কেন জানি উপাদেয় মনে হয়নি নিজের কাছে। ফলে টাকা এসেছে---উড়িয়ে ফেলেছি। যার খেসারত এখন দিচ্ছি। টাকা খুব নির্মম ভাবেই আমার উপর প্রতিশোধ নিয়েছে। আকন্ঠ ঋণের সমুদ্রে ডুবে আছি। মাসের শুরুতে যা পাই--- ক্রেডিট কার্ড আর যাবতীয় দেনা শোধ করতে গিয়ে কিছুই হাতে থাকে না।
আমার বেতন যেন অনেকটা স্বৈরিনী। নামে মাত্র আমার---তার আসল ভোক্তা অন্যেরা। সে আসে---সে চলে যায়---
গতকাল দেখলাম ব্যাঙ্কে মাত্র ৩২ টাকা আছে। ভাবছিলাম ৩২ টাকা দিয়ে কি করা যায়? প্রতিদিন ম্যাকডোনাল্ডের ডলার মেনু খেলে এক মাস বাঁচতে পারব---কিন্তু খালি পেট ভরানো তো শেষ কথা নয়। ৩২ ডলার দেশে কত টাকা? ৩২ x ৭০=২২৪০ টাকা। এই টাকায় কি দেশে এক মাস টেকা সম্ভব?
অনেক সময় গেছে ব্যাঙ্কে ৩ টাকা পড়ে আছে। সে খেয়াল নেই। গেছি কফি খেতে। কফি খেতে সাথে বন্ধুও গেছে। দুইজনের কফির দাম এসেছে ৬টাকা। খুশি মনে বাসায় ফিরেছি। পরে যখন ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট চেক করেছি--দেখেছি ঐ বাড়তি ৩ টাকার জন্য ৩৫ ডলারের ওভার ড্রাফট খেয়েছি।
এরপরও লজ্জা হয় নি।
এমনও হয়েছে--ম্যাকডোনাল্ডে গেছি বা বার্গার কিং এ গেছি। অর্ডার দিতে গিয়ে ঘামছি। দেখা যাবে হয়ত ব্যাঙ্কে টাকা নেই---কার্ড ঘষার পর বলবে--Sorry, your card has been declined! Do you have any other card? আমি মাথা নীচু করে বেরিয়ে আসি। মাথা ঘুরিয়ে না দেখলেও টের পাই কয়েক জোড়া চোখ অনুকম্পার চোখে হয়ত তাকিয়ে আছে।
শুধু এইসব কারণে মাঝে মাঝে লক্ষ্মীছাড়া-রকমের বড়লোক হতে ইচ্ছে করে---
রোজা রাখলে সারা দিন ঘুমুতাম আর কেবল খাবারের স্বপ্ন দেখতাম।
এখন আমি বেকার---ব্যাঙ্কে ৩২ টাকা--- No wonder I am dreaming about money!!
কে জানে হয়ত বা ছিলাম।
অনেক দিন ধরে এই পৃথিবীতে পড়ে আছি। সব কিছু আগের মত মনেও পড়ে না। মনে পড়ে শুধু ছেঁড়া ছেঁড়া দৃশ্যপট---স্কুল ছুটি-- মায়ের সাথে করে ঘরে ফেরা-- মাঝে মাঝে কারেন্ট চলে যাওয়া রাতে ঘি দিয়ে ভাঁপ ওঠা সাদা ভাত খাওয়া--- পাখি ধরার ফাঁদ পেতে সারা দুপুরের রোদ মাথায় নিয়ে বসে থাকা--- সন্ধ্যা বেলায় শিয়ালের দলের গর্বিত হুকুৎকার (হুক্কা হুয়া বলে চিৎকার-- শব্দটা মাত্র তৈরি করলাম--হে হে হে) শুনে গুটিশুঁটি মেরে বাবার কাছে গিয়ে বসা, শীতের দিনে সকালে উঠে মুখ হাঁ করে ধোঁয়া বের করা এবং অদৃশ্য সিগারেট খাচ্ছি এমনটা ভেবে নিজের মনে মনেই হাসা---
স্মৃতির পর স্মৃতি, দৃশ্যের পর দৃশ্য
এখন বেকার হয়ে আমার অখন্ড অবসর। আগে যে স্মৃতিগুলো কাছে ভীড় করার সময় পেত না---এখন তারা সকাল হতেই আমার কোলে উঠে বসে থাকে। আগে যে সব স্মৃতিকে কড়া শাসনে রাখতাম--এখন তাদের ডেকে ডেকে দুধ-কলা খেতে দেই---তারা আমার ঘরের ছাদে বসে সারা দিনমান বাক-বাকুম করে।
এক নিরাময় অযোগ্য আলসেমিতে পেয়ে বসেছে। কোন কিছুই করতে মন চায় না।
খালি মনে হয়--অনেক তো হল--এবার খানিক দম নে বেটা!
মাঝে মাঝে মনে হয়---কী ভীষন তাড়াতাড়ি আমার দম ফুরিয়ে গেল এই পৃথিবীতে। লোকজন দেখি দিন-কে-দিন অধরাকে ধরার আশায় ছুটছে দিক-বিদিক। আমার বয়েসী কতজনকে দেখি এখনো যেন সতেরো বছরের কিশোর।
আমিই কেন জানি বুড়োটে মেরে গেলাম। এ নিশ্চয়ই আমার উল্টা-পাল্টা সব গান শোনার ফল! আমি যখন ইস্কুলে থাকতেই ক্ল্যাসিকেল গান শোনা শুরু করলাম--আমার আত্মীয়ের মন্তব্য ছিল---এইসব তো বুড়োদের গান--তুই এই বয়েসে এইসব শুনছিস কেন?
কে জানে, তার কথাই ঠিক হবে হয়ত-- এইসব শুনে শুনেই---
জীবনে আরেকটা দুঃখ আমার কখনো যাবে না।
টাকা-পয়সা আমার জমানো হল না। অর্থ নিয়ে আসলে সেই অর্থে আমার কোন মুগ্ধতা বা লোভ নেই। বরং উল্টা---এক ধরনের বিরাগ আছে, মমত্বহীনতা আছে। কখনো বুদ্ধিমানের মত টাকা জমানো শিখিনি। এইটা যে আসলে জমানো যেতে পারে এই ধারণাটাই কেন জানি উপাদেয় মনে হয়নি নিজের কাছে। ফলে টাকা এসেছে---উড়িয়ে ফেলেছি। যার খেসারত এখন দিচ্ছি। টাকা খুব নির্মম ভাবেই আমার উপর প্রতিশোধ নিয়েছে। আকন্ঠ ঋণের সমুদ্রে ডুবে আছি। মাসের শুরুতে যা পাই--- ক্রেডিট কার্ড আর যাবতীয় দেনা শোধ করতে গিয়ে কিছুই হাতে থাকে না।
আমার বেতন যেন অনেকটা স্বৈরিনী। নামে মাত্র আমার---তার আসল ভোক্তা অন্যেরা। সে আসে---সে চলে যায়---
গতকাল দেখলাম ব্যাঙ্কে মাত্র ৩২ টাকা আছে। ভাবছিলাম ৩২ টাকা দিয়ে কি করা যায়? প্রতিদিন ম্যাকডোনাল্ডের ডলার মেনু খেলে এক মাস বাঁচতে পারব---কিন্তু খালি পেট ভরানো তো শেষ কথা নয়। ৩২ ডলার দেশে কত টাকা? ৩২ x ৭০=২২৪০ টাকা। এই টাকায় কি দেশে এক মাস টেকা সম্ভব?
অনেক সময় গেছে ব্যাঙ্কে ৩ টাকা পড়ে আছে। সে খেয়াল নেই। গেছি কফি খেতে। কফি খেতে সাথে বন্ধুও গেছে। দুইজনের কফির দাম এসেছে ৬টাকা। খুশি মনে বাসায় ফিরেছি। পরে যখন ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট চেক করেছি--দেখেছি ঐ বাড়তি ৩ টাকার জন্য ৩৫ ডলারের ওভার ড্রাফট খেয়েছি।
এরপরও লজ্জা হয় নি।
এমনও হয়েছে--ম্যাকডোনাল্ডে গেছি বা বার্গার কিং এ গেছি। অর্ডার দিতে গিয়ে ঘামছি। দেখা যাবে হয়ত ব্যাঙ্কে টাকা নেই---কার্ড ঘষার পর বলবে--Sorry, your card has been declined! Do you have any other card? আমি মাথা নীচু করে বেরিয়ে আসি। মাথা ঘুরিয়ে না দেখলেও টের পাই কয়েক জোড়া চোখ অনুকম্পার চোখে হয়ত তাকিয়ে আছে।
শুধু এইসব কারণে মাঝে মাঝে লক্ষ্মীছাড়া-রকমের বড়লোক হতে ইচ্ছে করে---
রোজা রাখলে সারা দিন ঘুমুতাম আর কেবল খাবারের স্বপ্ন দেখতাম।
এখন আমি বেকার---ব্যাঙ্কে ৩২ টাকা--- No wonder I am dreaming about money!!
11 comments:
জীবন যখন শুকায়ে যায়,করুণাধারায় এসো
সকল মাধুরী লুকায়ে যায়- গীতসুধারসে এসো
কর্ম যখন প্রবল আকার গরজি উঠিয়া ঢাকে চারিধার
হৃদয়প্রান্তে হে জীবননাথ শান্ত চরণে এসো
ধন্যবাদ সেঁজুতি। আপনার ব্লগ সাইটটিও দেখলাম। চমৎকার হয়েছে। নিয়মিত লেখালেখি শুরু করে দিন।
শুভেচ্ছা নিরন্তর
আমি খুব খুব আগ্রহ নিয়ে রুদ্ধশ্বাসে আপনার লেখা পড়তে শুরু করি। কিন্তু শেষ হলে বুকের ভেতর কেমন একটা দম আটকানো কষ্ট হতে থাকে। তবু ঘুরে ফিরে আপনার অপূর্ব লেখাগুলো আবার করে পড়তে ইচ্ছে করে। কষ্ট পাইয়ে ভালো লাগাবার কি অদ্ভুত লেখার ক্ষমতা আপনাকে দিয়েছেন ঈশ্বর! আমি কখনই আপনাকে হিংসে করিনা। তা করতেও যোগ্যতা লাগে। আপনার লেখার জন্য আমার আছে শুধুই বিমুগ্ধতা।
আশালতা,
আপনার মন্তব্য পেয়ে খুব ভাল লাগল।
আপনার মনটা খুব সুন্দর---তাই আমার এমন আজে-বাজে লেখার মাঝেও আপনি ভাল কিছু খুঁজে পান। আপনার এই সহৃদয় মন্তব্য আমার জন্যে অনুপ্রেরণা হয়ে রইল।
অনেক অনেক ভাল থাকুন
মানুষের জীবনে মাঝে মাঝে কিছু কিছু জিনিসের আবসেন্স খুব জরুরী হয়ে যায় !! টাকা তেমন-ই এক অবস্তু !!
এনজয় দ্যাট এম্পটিনেস !!এনজয় দ্য ডিমান্ড অব মানি !!
পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ ভূ-কন্যা! আপনার নামটা বেশ মনে ধরেছে---
এখন কি করি... কি করি...!!
:-)
অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম। সেই পুরোনো একই আমেজ। পড়া শেষ হওয়ার পর মনে হতে থাকে এ প্রায় আমারই গল্প।
পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ বস!
প্রথম তিনটে প্যরাগ্রাফ আর চার নম্বর প্যারার অর্ধেকটা তো আমার লেখার কথা! আপনি কিভাবে আমার মনের কথা পড়ে ফেললেন?
"এইসব তো বুড়োদের গান--তুই এই বয়েসে এইসব শুনছিস কেন?" এই কথাগুলো যে কতবার শুনেছি :(
হা হা হা
যাও ওইসব প্যারাগ্রাফের সত্ত্ব ত্যাগ করে তোমার করে দিলাম--এখন খুশি তো?
ভাল থেকো বস
Post a Comment